” নিঃস্তব্ধ পৃথিবী “-by Ahnuf Sunvee
চোখের পাপড়ি নাড়তে একটু কষ্ট
হচ্ছে । কি যেনো জমাট
বেধে আছে পাপড়ির উপর । হাত
নাড়তে চাইলাম । পারলাম না ।
অবাক হলাম খুব ।
ডান হাত নাড়তে গিয়ে দেখি হাতটা অবশ
হয়ে আছে । আর বাম
হাতটা কয়েকটন ভারী । কিছুক্ষন
নাড়ানাড়ির ব্যার্থ
চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিলাম । আর এখন কষ্ট করে হাত
কেনো নাড়াতে পারছি না , এই
রহস্যের সমাধান
করতে ইচ্ছা করছে না ।
আমি শুয়ে আছি …। তবে ঠিক আমার
রুমে নয় । শক্ত কোন জায়গায় । আবছা ভাবে আকাশ
দেখতে পাচ্ছি । বেশ মেঘলা ।
আমি কি তাহলে ছাদে শুয়ে আছি ? কি জানি ! হবে হয়তো ।
মাঝে মাঝেই তো এরকম
পাগলামী করি । কিন্তু ঠিক কখন
যে এসেছিলাম সেটাই
মনে করতে পারছি না ।
স্মৃতির ডাইরির পাতা আস্তে আস্তে উল্টাতে লাগলাম
। এক পৃষ্ঠা , আরেক পৃষ্ঠা । একদম
শেষ দিকের পৃষ্ঠাগুলোর
দিকে নজর দিলাম ।
কালকে সকালের কথা মনে পরলো ।
ভোরে উঠে জামাতে গিয়ে নামাজ পড়েছি । তারপর বাসায়
এসে অনেকক্ষন ব্যায়াম করলাম । ঠিক তখনই তরু বেগমের ফোন
আসলো ।
মুচকি হেসে ফোনটা রিসিভ করার
সাথে সাথেই ওর কন্ঠস্বর কাঁচের
চুড়ির মতো রিনিক ঝিনিক
করে উঠলো । তরু মেয়েটা বেশ মিষ্টি ।
আমি মাঝে মাঝে খুব অবাক হই ।
এতো এতো ছেলের
মধ্যে সে কেনো আমাকেই
বেছে নিল ? অথচ আমি কোন
বিশেষ ব্যাক্তিত্ব নয় অথবা এমন কিছুই নেই যার
ফলে পছন্দ করা যায় ।
এই রহস্যের খোলাসা তরু
করেনি । আর আমিও তেমন
খোঁচাইনি । বলা যায় এক প্রকার
হাল ছেড়ে দিছি । যে দস্যি মেয়ে !
বেশি খোঁচাখুঁচি করলে আমার
অবস্থা কেরোসিন করে দিবে সে ! তাই ওসব প্রশ্ন
থেকে দূরে থাকাটাই ভাল মনে হয়
আমার কাছে । তরুর সাথে আমার সর্ম্পকটা গত ৩
বছর ধরে । তার বাসার সবাই
মোটামুটি জানে আর আমার বাসায়
বাবা ছাড়া সবাই জানে ।
বলা যায় আমাদের
সর্ম্পকটা নিয়ে কারো কোন আপত্তি নেই । প্রতিদিন তরু
বেগম আমাকে সকাল
থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জ্বালায় ।
১০ মিনিট পর পরই ফোন
অথবা মেসেজ দিবেই সে । এই
কথাটা মনে হতেই মাথায় বাজ পরলো । ইস্ তরু নিশ্টই কল
করেছিল ! মোবাইটা পকেটেই
থাকার কথা । কিন্তু হাত
তো নাড়াতে পারছি না ! ইস্ আমার
পাখিটা দুশ্চিন্তা করবে ! উফ্
আজকে কি যে হলো আমার ! সম্ভবত
শরীরটা খারাপ তাই
হয়তো এরকম লাগছে । নিজের অজান্তেই আবার স্মৃতির
পাতা ঘাটতে লাগলাম ।
কালকে ছোট বোনটা আবদার
করেছিলো একটা লাল
শাড়ি কিনে দেওয়ার জন্য । ও
নাকি বউ সাজবে ! আমার ছোট বোনটার বয়স সবে ৮ বছর । আমার
চেয়ে প্রায় ১৪ বছরের ছোট।
বোনটা আমার কলিজার টুকরা । বাবা মা একটু বকা দিলেই আমার
কাছে এসে আশ্রয় নেয়।
আদুরে গলায় কথা বলে। ছোট্ট
পরীর মত বোনটার কোন দাবীই
অপূর্ন রাখতে চাই না।
তাকে কথা দিয়েছিলাম আজকে এনে দিব । ইস্ প্রায় ভুলেই
গিয়েছিলাম কথাটা । যাক
মনে পরে যাওয়ার ভালই হল ।
মাঝে মাঝে স্মৃতির
ডাইরি ঘাটাঘাটি করাটা বেশ
ভালই মনে হচ্ছে । কাল রাতে অনেক দিন পর
বন্ধুদের
সাথে আড্ডা দিয়েছিলাম ।
জীবিকার প্রয়োজনে একেকজন
একেকদিকে বিক্ষিপ্ত ।
কালকে একসাথে মিলিত হয়ে দারুন মজা করলাম । কৈশরের
সোনালী দিনগুলোর
কথা মনে পরে গেলো ।
আজকে হটাত্ করেই স্মৃতির
ডাইরির
পুরোনো পাতাগুলো দেখতে খুব ইচ্ছা করছে ।
পৃষ্টা উল্টাতে থাকলাম ডাইরির
। একটা পাতায় এসে থেমে গেলাম ।
ঈদের দিন ছিলো । বাবার
সাথে ঈদগাহ্ যাচ্ছি ।
বাবা আমার হাতটা ধরে আছেন ।
আর আমি পরম নিশ্চিন্তে তার
হাত ধরে হাটছি । তারপর আবার পৃষ্ঠা উল্টাতে লাগলাম । মায়ের
মুখটা ভেসে উঠলো । মা আমার
জন্য একটা সোয়েটার বুনেছেন ।
সেটা পরে আমি নাচানাচি করছি ।
আর
মা মমতা মাখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে । এই স্মৃতিটার
কথা ভাবতে ভাবতে নিজের
অজান্তেই মুচকি হাসতে চাইলাম
। কিন্তু একি ! ঠোট তো নড়ছে না !
একদম কাঠ হয়ে আছে !
আচ্ছা আজকে এরকম অদ্ভুত অনূভুতি কেনো হচ্ছে ? যাই
করতে চাচ্ছি পারছি না ! কোন একটা সমস্যা হয়েছে । দ্রুত
স্মৃতির ডাইরির
পাতা উল্টাতে উল্টাতে থাকলাম
। আজকের তারিখে এসে স্থির
হলাম । ভাবছি আমি । ডাইরির
লেখাগুলো অস্পষ্ট । পড়তে কষ্ট
হচ্ছে । আজকে সকালে , মায়ের
জন্য ঔষধ , রামিশার জন্য
একটা লাল টুকটুকে শাড়ি আর তরুর
জন্য একটা বার্থডে গিফট্ কিনতে বের হয়েছিলাম । মায়ের
ঔষধ , রামিশার
শাড়ি কিনে একটা এন্টিক শপের
দিকে যাচ্ছিলাম । কাছেই
একটা জনসভা হচ্ছিলো । মাইকের
প্রচন্ড শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছিল । হটাত্ করেই বিকট শব্দ
হলো একটা । অনেক
গুলো সাইকেলের চাকা যদি এক
সাথে পাংচার হয় তাহল যেমন
শব্দ হবে শব্দ অনেকটা সেইরকম
। এরপর কি হয়েছে খেয়াল নেই ।
শুধু মনে আছে মাথা আর
সারা শরীরে তীব্র ব্যাথা ছিল ।
কিন্তু এখন ব্যাথাটা অনুভব
করতে পারছি না । আর কিছুই
মনে করতে পারছি না । চোখের দৃষ্টি ঝাপসা । কিছুই
দেখতে পাচ্ছি না স্পষ্ট করে । হটাত্ অনেকগুলো লোকের
কন্ঠস্বর শুনলাম । দুজন লোক
আমার পাশে এসে থামলো ।
আমাকে উঠিয়ে নিলো । আমি টের
পাচ্ছি একজন আমার কাধে আর
একজন আমার পায়ে ধরে আমাকে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কোথাও…
চিত্কার করে বলতে চাইলাম
“কোথায় নিয়ে যাচ্ছ আমাকে !”
গলা দিয়ে স্বর বের হলো না ।
আমার
শরীরটাকে তারা ছুড়ে দিলো । ধপ্ করে ইস্পাতের কোন মেঝের উপর
পরলো আমার শরীরটা । তারপর
একটা ইন্জিন স্টার্ট নিলো ।
আমি প্রানপনে চিত্কার
করতে চাইলাম । কিন্তু পারলাম
না । হটাত্ আমার চোখের
ঝাপসা ভাবটা চলে গেলো । সেই
জায়গা গ্রহন করলো ঘন
কালো অন্ধকার । ভয় পেলাম খুব ।
এসব কি হচ্ছে !
আস্তে আস্তে শ্রবন শক্তিও কমে যেতে থাকলো আমার ।
এতোক্ষন ইন্জিনের আওয়াজ
পাচ্ছিলাম অনেক স্পষ্টভাবে ।
কিন্তু এখন অস্পষ্ট
হয়ে গেছে শব্দটা । আমার
সামনে চেনা পৃথিবী অচেনা হয়ে যাচ্ছে দ্রুত । সরব পৃথিবী বদলে গেছে ।
সেখানে স্থান
নিয়েছে নিঃস্তব্ধতা । আমি দ্রুত
তলিয়ে যাচ্ছি নিঃস্তব্ধ
পৃথিবীর বুকে ।
Posted on এপ্রিল 24, 2012, in GOLPO and tagged Ahnuf Sunvee, নিঃস্তব্ধ পৃথিবী. Bookmark the permalink. 2 টি মন্তব্য.
প্রিয় ব্লগার, বাংলা ওয়ার্ডপ্রেসের ব্লগার/লেখকদের নিয়ে তৈরি করা ফেসবুকের এই গ্রুপে আপনাকে যুক্ত হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
https://www.facebook.com/groups/391373174244563/
অসাধারণ!